কাউলুন চাইনীজ রেস্টুরেন্ট

প্রিয়ার চাহনি (মে ২০১২)

রীতা রায় মিঠু
  • ২৪
  • ১১
এক
আজ সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা হয়ে আছে। বৃষ্টি আসবে কিনা তা বোঝা যাচ্ছেনা। যদিও বাংলা মাস হিসেবে এটা আষাঢ়ের শেষ, বর্ষাকাল, কিন্তু মেলবোর্নে এখন শীত। আর শীতকালেই মেলবোর্নে বেশী বৃষ্টি হয়। আজ ১৫ই জুলাই, আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজকে আমাদের পঁচিশতম বিবাহবার্ষিকী। পাশের ঘর থেকে সানাইয়ের সুর ভেসে আসছে। আমাদের মামনির কাজ। ভোর রাতেই বিসমিল্লাহ খাঁর সানাইয়ের ক্যাসেট চালিয়েছে। সন্ধ্যাতে বোধ হয় বিরাট বিশাল কিছুর আয়োজন হতে যাচ্ছে। আমাকে বা মল্লিকাকে ওরা কিছুই জানতে দিচ্ছেনা। আজকে সংসার থেকে আমাদের ছুটি। মল্লিকাকে পাশে দেখছিনা, হয়তো উঁকিঝুঁকি মেরে দেখতে চাইছে মেয়েদের প্রস্তুতিপর্ব। মেয়েরা অবশ্য মা’কে সাথে নিতে রাজী আছে, তাদের মা পাশে থাকলে পৃথিবীর কোন কাজ আটকে থাকবেনা। কিন্তু আমাকে মনে হয় অন্দরমহলে ঢুকতেই দিবেনা আজকে। আমাকে আজকে এই ঘরে থাকতে বলা হয়েছে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত, এটা আমাকে মানতেই হবে। কোন ছাড়ান কাটান নেই। মেয়েদের হুকুম আমাকে মানতেই হবে। যাক গিয়ে, মল্লিকা যখন পাশে নেই এই সুযোগে ওর জন্য আমার তরফ থেকে ‘উপহার’ রেডি করে ফেলা যায়। গতকালকেই আমি মল্লিকার জন্য ‘কাজল’ এর সেট কিনে এনেছি। আজকের দিনে এর চেয়ে ভালো উপহার আর হয়না। কাজলের সেট এর সাথে ‘উপহারবাণী’ দিচ্ছি, আমার বিশ্বাস মল্লিকা খুশীতে কেঁদে ফেলবে। ওর ধারণাতেই নেই ওর জন্য কি উপহার অপেক্ষা করছে।


বাইরে হালকা গুঁড়ির বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি আমার ভালো লাগেনা, চারিদিকে প্যাচপ্যাচে কাদা, যেখানেই যাও বগলে ছাতা নিয়ে ঘুরতে হয়, বিশ্রী ব্যাপার। তবে আজকে ভালই লাগছে। খুবই নস্টালজিক হয়ে পড়ছি মনে হয়। আমাদের বিয়ের দিনও বৃষ্টি হয়েছিল, খুব জোরে না হলেও সারাদিনই ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার বৃষ্টি ভালো লাগেনা শুনে মল্লিকা আমাকে বলেছিল, কারো বিয়ের দিন যদি বৃষ্টি হয় তাহলে সেই দম্পতি খুব সুখী হয়। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র, এমন কথা শুনে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু বিয়ের দিন যতই এগিয়ে আসতে লাগলো, আমার বিজ্ঞানী মনেও কেমন যেনো ছেলেমানুষি সংস্কার এসে ভর করতে লাগলো। মনে হচ্ছিল, একটু বৃষ্টিতে তেমন আর কি-ইবা ক্ষতি হবে, বিনিময়ে যদি সুখের একটা জীবন পাই, তা’হলে ঝড় বৃষ্টি সব কিছু মেনে নিতে রাজী আছি। আমাকে অবাক করে দিয়ে পাঁচদিন কাঠফাটা রোদের পরে আমাদের বিয়ের দিনটিতেই বৃষ্টি নেমেছিল। আমি ধরেই নিয়েছিলাম, মল্লিকাকে নিয়ে আমি সুখী হবো।


ইংরেজিতে যাকে বলে ‘সেলফ মেইড ম্যান’, আমি হচ্ছি তেমনি একজন। ছোটবেলা থেকেই ঘরছাড়া আমি। বাবা-মা গ্রামে থাকতেন, পড়ালেখায় অসম্ভব মেধাবী ছিলাম বলেই বাবা আমাকে গ্রামে না রেখে জেলা শহরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আত্মীয়ের বাড়ীতে থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে ঢাকা চলে আসি। ঢাকা শহরে আমার পরিচিত কেউ ছিলনা, ব্যাপটিস্ট হোস্টেলে সীট পেয়েছিলাম। ওখানেই কিছু সিনিয়র দাদা আমাকে তাদের আপন করে নেয়। আমি ম্যাট্রিকে ঢাকা বোর্ডে ফার্স্ট হয়েছিলাম, উচ্চমাধ্যমিকেও ভালো করবো তা আমার বাবা জানতেন। আমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারতাম, কিন্তু আমার বাবার শখ ছিল আমি যেনো কেমিস্ট্রি পড়ে গবেষক হই। আমি যখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি, রেজাল্ট বের হওয়ার আগেই আমার বাবা মারা গেলেন। আমি এই প্রথম বুকের ভেতরটাতে বিরাট এক শূণ্যতা টের পেলাম। সেই কিশোর বয়স থেকেই আমি বাড়ী ছাড়া, তারপরেও মনে হতো মাথার উপর আমার বাবা বেঁচে আছেন। বাবার মৃত্যুতে আমি একা হয়ে গেলাম। বাবার ইচ্ছেকেই জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হয়ে গেলাম। আমি যখন প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি, তখনই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। আমার এক সিনিয়র বন্ধু, মৃদুল’দা আমাকে গ্রামে চলে যেতে বললে আমি গ্রামে মায়ের কাছে ফিরে যাই। তারপরতো মা’কে নিয়েই ইন্ডিয়াতে চলে গেলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমার মা ইন্ডিয়াতেই থেকে গেলেন, আমার দাদার কাছে। আমি চলে এলাম দেশে। আবার একা হয়ে গেলাম। পরিবারের মাঝে থাকার যে আনন্দ, তা আমি পাইনি।

দেশে এসেই আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করে দিলাম। এবার আর গ্রামে যাওয়ার কোন পিছুটানও থাকলোনা। একেবারেই স্বাধীন এক যুবক আমি। অনার্সে, মাস্টার্সে যথারীতি দারুণ রেজাল্ট করে বাবার সাধ পূর্ণ করার জন্যই আমি উচ্চ শিক্ষার্থে আমেরিকা চলে যাই। আমেরিকাতে পিএইচডি করছিলাম। পূর্ণ যৌবন, চারিদিকে কত রকমের হাতছানি, স্কলারশিপের টাকাতে আমার ভালই চলছিল। রিসার্চ করি, সংসার নেই, ঝাড়া হাত-পা, একটু ছুটি পেলেই বেড়িয়ে পড়তাম, যখন যেখানে মন চায় চলে যেতাম। কলেজ লাইফে অনেক কষ্ট করে চলতে হয়েছে আমাকে, ইউনিভার্সিটিতেও একই অবস্থা। আমি যখন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার পোস্টে চাকুরী পেলাম, আমার বন্ধুর মা’কে প্রণাম করতে গেছিলাম। কাকীমা আমাকে আশীর্বাদ করে হাতে গুঁজে দিয়েছিলেন স্যুট বানানোর জন্য টাকা। উনি বলেছিলেন আমি যেনো স্যুট পরে প্রথম দিন ক্লাসে ঢুকি। আমার টাকা পয়সা ছিলনা, কিন্তু আমার বন্ধু-বান্ধব সকলেই ছিল ধনী পরিবারের সন্তান। তাদের সাথে থেকে থেকে আমারও একটা বিলাসী জীবন পেতে ইচ্ছে করতো।

আমার বন্ধুরা আমাকে অতনু না ডেকে ‘সুপুরুষ’ বলে ডাকতো। লম্বায় ছিলাম প্রায় ছয় ফিট, গায়ের রঙ ছিলো পাকা কলার মত, ভালো আঁকতে পারতাম, চলনে বলনে ছিল এক ধরনের কেয়ারলেস ভাব। ফ্রেঞ্চকাট দাড়িতে আমাকে যুবক রবীন্দ্রনাথের মত লাগত।
এমন রূপে গুনে অনন্য মানুষটি বিয়ের মার্কেটে এসে পিছিয়ে পড়েছিলাম। আমারতো গার্জিয়ান বলতে তেমন কেউ ছিলনা দেশে। তাই আমার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যেতেও কারো মনে আসেনি আমাকে বিয়ে করানোর কথা। ৩২ বছর বয়সী বন্ধুদের প্রায় সকলেই বিয়ে করে সংসারী হয়ে গেছিল। আমার আর ভাল লাগছিলনা আমেরিকার জীবন। জীবনে দাঁড়াতে হবে, এটাই সব সময় মাথায় ঘুরতো বলেই কিনা জানিনা, প্রেম করার বা প্রেমে পড়ার সুযোগও আসেনি। তার উপর ছিলাম একটু শান্ত, মুখচোরা স্বভাবের। তারপরেও নিজে থেকে যেচে অনেক মেয়েই আমার সাথে পরিচয় করতে চেয়েছিল। কিন্তু কাউকে দেখেই আমার প্রেম করতে ইচ্ছে হয়নি। পিএইচডি শেষ হতেই আমি বেশ কয়েকটি চাকুরীর অফার পেয়েছিলাম, লোভনীয় বেতনের অফার, কিন্তু আমার মন ছুটে গেছিল। আর ভালো লাগছিলোনা প্রবাস জীবন, ফিরে গেছিলাম দেশে।

দুই

দেশে এসে উঠেছিলাম মৃদুল’দার বাড়ীতে। মৃদুল’দা আমার সেই হোস্টেল লাইফের বন্ধু বা তার চেয়েও বেশী, বড়ভাই। তখন ৩২ বছরের যুবক আমি। বন্ধুবান্ধব সকলেই জাপ্টে ধরেছে আমাকে, ব্যাচেলরের খোলস ছেড়ে দিয়ে যেনো ওদের ক্লাবে জয়েন করি। ততদিনে আমারও যাযাবর জীবনে একটু যেনো ভাটার টান টের পাচ্ছিলাম। আমেরিকাতে ছিলাম ছয় বছর, সেই ছয় বছরের মধ্যে তিনবার দেশে এসেছিলাম বেড়াতে, ইন্ডিয়াতে বুড়ী মা’কে দেখেই চলে আসতাম বাংলাদেশে। আমার মা ধরেই নিয়েছিল, আমি আমেরিকাতেই কোন মেমকে বিয়ে করবো।

এমনটা ধরে নিয়েও মুখে বলেছিল, “ দুলাল, বাবাগো, তুমি আমেরিকাতে থাইকো, কিন্তু একটা বাঙ্গালী হিন্দু মাইয়া বিয়া কইরো। এর বেশী কিছু চাইনা”।

আমি জবাবে বলেছিলাম, “আমেরিকাতে মেম ভর্তি, বাঙ্গালী পাবো কই? তার চেয়ে আমেরিকান মেমকে বাংলা শিখায়ে দেবো, তাহলেইতো হয়ে যায়। কি বলো”?


আমার মা একটু ঘোলাটে চোখে আমার মুখটা দেখে নিয়ে মুচকি হেসেছিল। বুঝে ফেলেছিলো, ছেলে মায়ের সাথে মজা করছে। মা’কে বলার ইচ্ছেই হয়নি, অলরেডি চার পাঁচটি মেয়ের বাপ আমার পেছনে আঠার মত লেগে আছে মেয়েকে আমার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। সবগুলো মেয়েই সুন্দরী, উচ্চশিক্ষিত। কিন্তু আমি যেমনটি চাইছিলাম, পাচ্ছিলামনা।

এর মধ্যেই একদিন শফিকের বাসায় গেলাম। শফিক আর নিপা, সাথে চার বছর বয়সী ছোট্ট মেয়ে মিশা, থাকতো কলাবাগানের সুন্দর এক ফ্ল্যাটে। শফিক নিপাকে দেখলেই মনে হতো যেনো ঈশ্বর হাতে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে ওদেরকে বানিয়েছে। একেবারে ‘মেড ফর ইচ আদার’। নিপা খুবই লাজুক ছিল, ঠাট্টা ইয়ার্কির কথা শুনলেও লজ্জায় ওর ফর্সা মুখ রাঙা হয়ে উঠতো। আমাদের মধ্যে কবীর ছিল খুবই ফাজিল। নিপাকে ক্ষেপাতে ওস্তাদ ছিল। আমি নিপাকে কখনও ক্ষেপাতামনা। ওর শান্ত মুখশ্রীর দিকে তাকালেই আমার বুকের ভেতরে একটা যন্ত্রণা টের পেতাম। টের পেতাম আমি একেবারেই একা। আমার আপনার জন বলতে কেউ নেই। সংসারে আমিই ছিলাম সবার ছোট। একটা ছোট বোনও যদি থাকতো আমার, ঠিক নিপার মত! নিপা হয়ত আমার কষ্টটা বুঝতে পারতো।।

সেই থেকেই নিপা আমাকে তাড়া দিত, “অতনু’দা, আপনাকে একটা বিয়ে করতে হবে। এবং সংসারী হতে হবে। আমি আপনার জন্য মেয়ে পছন্দ করবো। আমি যাকে পছন্দ করবো, তাকেই আপনার বিয়ে করতে হবে”।

সেদিনও একই কথা বলতেই আমি বলেছি, ‘তথাস্তু। মেয়ে খুঁজে বের করলেই হবেনা, মেয়েটি আমার মনমত হতে হবে। মেয়েকে হতে হবে দারুণ বুদ্ধিমতী কিন্তু শান্ত স্বভাবের। তোমার মত সুন্দরী না হলেও কিছুটা সুন্দরী তো হতেই হবে। নাহলে আমার প্রেস্টিজ থাকবেনা, কি বলো”?

নিপা তখন বলেছিল, ‘ অতনু’দা, আপনিতো মৃদুল’দার বাড়ীতে আছেন। আগামী শনিবার আমাদের রোজা শুরু হচ্ছে। ঐদিন চলে আসবেন মৃদুল’দাকে নিয়ে। ইফতারের দাওয়াত রইলো। মহুয়া আসবে কুমিল্লা থেকে। মহুয়া শুনেছে আপনি দেশে এসেছেন। আমাকে বলেছে আপনাকে ঐদিন যেন অবশ্যই আসতে বলি’।

মহুয়ার কথা আমার ভালই মনে ছিল। শফিকের ছোটবোন। কি আমুদে একটা মেয়ে। যখন শফিকদের বাড়ীতে যেতাম, সারাটাক্ষণ হৈ চৈ করে বাড়ী মাতিয়ে রাখতো। শফিকের সাথে আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম ওদের কুমিল্লার বাড়ীতে। মহুয়া তখন ক্লাস সেভেন এইটে পড়তো। নিপাকে জিজ্ঞেস করতেই জানলাম যে মহুয়া ভিক্টোরিয়া কলেজে অনার্স পড়ছে। ফিজিক্স সেকেন্ড ইয়ারে। আগের মত আর চঞ্চলতা নেই। বুঝলাম ছয় বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। সেদিন নিপাদের বাড়ী থেকে চলে এসেই মৃদুল’দাকে বললাম নিপার দাওয়াতের কথা। মৃদুল’দা খুব একটা গা করলেননা দেখে আমিও আর চাপাচাপি করিনি।

তিন

শনিবার দুপুরের পরে আমি মৃদুল’দার বাড়ী থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেলাম কাঁটাবনে। খুব ভালো দেখে ফুলের একটি বুকে আর এক বাক্স চকোলেট কিনলাম। প্রথম রোজার ইফতারির দাওয়াতেতো আর খালি হাতে যাওয়া যায়না। ফুল নিপা আর মহুয়ার জন্য, চকোলেট ছোট্ট মিশামনির জন্য। মিশাকে দেখলেই আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। কি টুপুস টুপুস দুই গাল, দেখলেই মনে হয় একটা টোকা মেরে দেখিতো, গোলাপের পাপড়ি ঝরে পড়ে কিনা! ফুল আর চকোলেট কেনা হয়ে গেলে পরে দেখি সন্ধ্যা হতে তখনও ঘণ্টা দুই বাকী। অনেকদিন পরে দেশে এসে ঢাকার রাস্তায় হাঁটতে খারাপ লাগেনা, আমারও খারাপ লাগছিলোনা। হাঁটতে হাঁটতেই অনেকটা পথ চলে এসেছিলাম। এর মধ্যেই কিছু টোকাই দলবেঁধে আমার পিছু পিছু হাঁটছিল। আমি ওদের কথাবার্তা শুনে খুবই মজা পাচ্ছিলাম।

একজনকে বলতে শুনলাম, ‘ এই সাব’রে চাইপ্পা ধরলে বালা টেহা কামান যাইব’।

সাথে সাথে আরকজন বলে উঠলো, ‘বেডা ছাগল অইছস একখান, ইঞ্জিরি কইতে পারবি? এইডা ত আমরিক্কার সায়েব। টেহা না চাইয়া ইঞ্জিরিতে ডলার ডলার কইতে অইব। আমার বাপে একদিন এক সায়েবের কাছ থিকা এক ডলার বিক্কা পাইছিল’।

আমার খুব হাসি পাচ্ছিল ওদের কথা শুনে। আমাকে ওরাই শুধু না, আরও অনেকেই বিদেশী ভেবে ভুল করে। সেদিন বাসে উঠেছিলাম, কন্ডাক্টর দেখি আমার কাছে এসে বিগলিত হয়ে বলছে, ‘ এস্কিউজ সার, ইউর টিকিট’। আমি টাকা বের করে দিতেই টিকিটটা হাতে দিয়ে বললো, ‘থেঙ্ক ইউ’। চেঞ্জ ফেরত চাইতেই কন্ডাকটরের চোখ গোল হয়ে গেল, আমতা আমতা করে বললো, ‘ সার আফনে বাঙালি? আরে আমিত বিদেশি সায়েব বাবছিলাম। অখন আমার কাছে বাংতি নাইক্কা, ইট্টু পরেই দিতাছি”।

আমাকে সাহেব ভাবার কারণটা অবশ্য আমি নিজেই বের করেছি। আমি লম্বায় ছয় ফিট, গায়ের রঙ এমনিতেই ফর্সা, আমেরিকার মেরিল্যান্ডে ছয় বছর থেকে আরও ফর্সা হয়ে গেছি। তার উপর ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি, গায়ে আমেরিকার পোশাক, শরীর থেকে ভুর ভুর করে বিদেশী পারফিউমের গন্ধ, কথাও বলি একটু থেমে থেমে, সব মিলিয়ে ওদের মনে এক ধরনের বিভ্রম তৈরি হয়ে থাকে।

সেদিনও আমি আমার পেছন পেছন আসা বাচ্চাগুলোর দিকে ফিরে থেমে থেমে বললাম, “ টোমরা কেমন আছে। আমি বালো আছি। টোমরা কি খাইটে বালোবাসো?”

পুচকাগুলা অবাক হয়ে কি বলবে বুঝতে পারছিলোনা। বললো, ‘ইয়েচ সার। ওয়ান ডলার দেন। হেল্প করমুনে’।

খেলা আর বেশিদূর আগায়নি, আমি ওদের হাতে কিছুটাকা দিয়ে বললাম যে আমি সাহেব নই, টাকাগুলো যেনো ওদের বাবা বা মায়ের কাছে নিয়ে দেয়। এই বলেই একটা রিক্সা নিয়ে নিলাম। ইফতারী শুরু হওয়ার আধ ঘন্টা আগেই শফিকদের বাড়ী পৌঁছে গেলাম। ডোরবেল টিপে ধরেই নিয়েছি মহুয়া দরজা খুলবে। কিনতু দরজা খুলল সম্পূর্ণ অপরিচিত একমেয়ে। দরজা খুলে দিয়েই সে চলে গেলোনা।
আমাকে ঢুকতে দিল আগে, তারপরেই দরজা বন্ধ করতে করতেই বললো,
“আমার নাম মল্লিকা। মহুয়ার বান্ধবী আমি। আসলে নিপা ভাবী আর মহুয়া রান্নাঘরে ইফতারী রেডী করছে বলে আমিই এসে দরজা খুললাম। আপনি বসেন। আমি ভেতরে গিয়ে খবর দিচ্ছি”।

আমি প্রথমেই অবাক হয়ে গেলাম মেয়েটির স্মার্টনেস দেখে। আমাকে চেনেনা, জানেনা অথচ কি সহজভাবে কথা বলছে! আমিতো জানতাম আমাদের দেশের মেয়েরা অচেনা কারো সাথেই কথা বলতে লজ্জা পায়।
যাই হোক অবাক হওয়ার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে মল্লিকাকে জিজ্ঞেস করলাম, “ আচ্ছা তুমিতো আমাকে চেনোনা, অপরিচিত একজনকে এভাবে বাড়ীর ভেতর ঢুকিয়ে ফেললে”?

মল্লিকা বললো, ‘ ভাবী আমাকে বলেছে তার ভাইয়ের আসার কথা। ভাবীর ভাই দেখতে নাকি সাহেবের মত, কথাও বলে সাহেবের মত। তাছাড়া আপনি দেখতে কেমন তার একটা বর্ণণাও দিয়ে ফেলেছে ভাবী। তাই আপনাকে দেখামাত্র চিনতে কোন অসুবিধা হয়নি”।

আমি দ্বিতীয়বারে মল্লিকার দিকে সরাসরি তাকালাম। ওকে শুরুতেই ‘তুমি’ সম্বোধন করে ফেলেছি, ভয় পাচ্ছিলাম ও মাইন্ড করে কিনা। ‘তুমি’ বলার জন্য সরি বলতেই মল্লিকা হেসে ফেললো। মেয়েটির চোখ কথা বলে, যখন হাসি দিল, দেখলাম মেয়েটির হাসিও কথা বলে। বেশীক্ষন আর তাকিয়ে থাকতে পারছিলামনা, কি জানি কি মনে করে বসে এই ভেবে। আমাকে বসতে বলে মল্লিকা ভেতরে চলে গেলো। মল্লিকা হয়তো জানেনা যে শফিকের বাসার সর্বত্র আমার প্রবেশাধিকার আছে। তবু একটি তরুণী যখন বলে গেলো অপেক্ষা করতে, তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমি সোফাটার এককোনে গিয়ে বসেই পড়লাম। একটু বাদেই ভেতরের ঘরের পর্দা নড়তে দেখলাম। চুড়ির টুং টুং শব্দ, সাথে চাপা হাসি। হাসি একজনের না, মিলিত সুরের হাসি।

আমি এবার সোফা থেকে উঠে পড়লাম, দরজার কাছে গিয়েই গলা উঁচু করে বললাম, ‘নিপা আমি যাচ্ছি, ইফতারের সময় পার করে আবার ফিরবো’।

এটা বলার সাথে সাথেই হাসির রানী ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন। এসেই মহুয়া হৈ হৈ করে উঠলো, ‘ এটা কেমন কথা অতনু’দা, তুমি চলে যাচ্ছ কেনো? তোমাকে দেখার জন্য কুমিল্লা থেকে চলে এলাম, আমার সাথে দেখা না করেই তুমি চলে যাচ্ছো? আমেরিকায় থেকে থেকে বেশী সাহেব হয়ে গেছো, তাইনা?”

আমি মহুয়াকে দেখে অবাক হয়ে গেছি। কতবড় হয়ে গেছে! আমি বললাম, ‘ মহুয়া তুই এত বড় হয়ে গেলি কিভাবে? আমি দরজা নক করার সময় ভেবেছিলাম, তুই বুঝি দরজা খুলবি। কই তখনতো আমার কথা মনে পড়লোনা তোর, তুই রান্নাঘরে বসে রইলি”।

ততক্ষনে মল্লিকা এসে দাঁড়িয়েছে মহুয়ার পাশ ঘেঁষে। মহুয়া বললো, ‘কেনো যে দরজা খুলে দিলো, সে কি তোমার সাথে কোন রকম অভদ্রতা করেছে? বসতে বলেনি তোমাকে”?

মল্লিকা আমার দিকে তাকিয়ে মুখটিপে হাসছিলো। আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলামনা। এই দুই সুন্দরী আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করছে, তা ভালো মতই বুঝেছি। আমি তাড়াতাড়ি মহুয়াকে বললাম, “এই পাজী, এখনও একটুও বদলাসনি দেখছি। আর কয়দিন পরেইতো শশুরবাড়ী যাবি, ওখানে গিয়েও কি এমন করবি নাকি? ফাজিল কোথাকার! যা ভাগ, আমাকে ভেতরে যেতে দে, নইলে গাট্টা মারবো কিনতু”।

নিপা চলে এলো এরই মধ্যে। স্নান সেরে একেবারে রেডী হয়ে এসেছে, আযান দেয়ার সাথে সাথেই নামাজ পড়তে বসবে। আমাকে বললো, “ অতনু’দা, আমি জানি মহুয়া তোমাকে আজকে জ্বালিয়ে মারবে, আমাকে এতোক্ষন আসতেই দেয়নি। কি কান্ড বলো, এই মেয়ে আর বড় হবেনা। অতনু’দা তুমি ওদের সাথে গল্প করো, আমি নামাজ পড়েই চলে আসবো, মাত্রতো দশ মিনিটের ব্যাপার”।

এবার মহুয়া মল্লিকাকে নিয়ে আমার উলটো দিকের সোফাতে বসে পড়লো। আমি কেমন যেনো এক ধরনের অস্বস্তি টের পাচ্ছিলাম মনের মধ্যে। মল্লিকাকে দেখেই আমার ভালো লেগে গেছে। অথচ মল্লিকা তেমন কিছু সুন্দরী না। ওর চেয়ে ঢের বেশী সুন্দর মহুয়া। ওরা সমবয়সী, মহুয়াকে দেখে এখনও ওর মাথায় গাট্টা মারতে ইচ্ছে করে কিনতু মল্লিকাকে দেখে সেই ইচ্ছে হচ্ছিলোনা।

মহুয়া এবার বললো, “অতনুদা, আমি কুমিল্লা থেকে আসার আগেই মলিকে ফোন করে বলেছিলাম আজকে এখানে আসার কথা। মলি ঢাকা ভার্সিটিতে বোটানীতে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। আমিতো ভিক্টোরিয়া কলেজে ফিজিক্সে পড়ছি জানো বোধ হয়”।

মহুয়া বলে চলেছে আর মল্লিকা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মহুয়ার কথা শুনছিলাম বলে মনে হচ্ছিলনা। ওর কথার মাঝখানেই আমি মল্লিকাকে জিজ্ঞেস করে বসলাম, “তোমার বাঁ চোখে ঐ কালো স্পটটা কিসের মল্লিকা”?
আমার প্রশ্ন শুনে মল্লিকার মুখের হাসিটুকু মুছে গেল। কেমন এক থতমত গলায় বললো, ‘ আমার বার্থ মার্ক ওটা। আমার মা কি বলে জানেন, আমার এই চোখের তিলটা চোখে না হয়ে যদি গালে বা চিবুকে হতো, তাহলে নাকি আমাকে অনেক বেশী সুন্দর লাগতো”।

আমি ওকে বললাম, “ ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন। নিশ্চয়ই এই তিলটি চোখে বসানোর আগে ঈশ্বরের মনে খুব বড় ধরনের পরিকল্পনা ছিল”।

মহুয়া বললো, “এই অতনু’দা, আমার বন্ধুকে নিয়ে ঠাট্টা করোনা। মলির অনেক ছোটবেলা থেকেই এই তিল নিয়ে চাপা কষ্ট আছে মনে। বেশী কিছু বললে ও এখনই কেঁদে ফেলবে”।

আমি আর কিছু বললামনা, শুধু ওর চোখের দিকে আড়চোখে তাকাতে লাগলাম। চোখের ভেতর একটি স্পট মানুষের চেহারাকে এমন পালটে দিতে পারে! কি যে সুন্দর এই মেয়ের চোখ, ও বোধ হয় তখনও জানতোনা। তবে তিলের কথা জিজ্ঞেস করার পর থেকে মল্লিকা আমার দিকে আর তাকাচ্ছিলনা। অথচ আমার মন চাইছিল ও আমার দিকে আরেকবার তাকাক। বুকের ভেতর কেমন যেন খুব সুক্ষ্ম ব্যথা করতে লাগলো। আমার মনে হলো যেনো এই মেয়ের জন্যই বুঝি আমি এতোদিন অপেক্ষা করেছিলাম। প্রথম দেখাতেই এমন মনে হওয়ার কোন কারন নেই, অথচ মনে হচ্ছিল। আমি সাথে সাথে কথা ঘোরাতে চেষ্টা করলাম।
মহুয়াকে বললাম, “ এই মেয়ে, তোর ভাবী রোজা রেখেছে, আমিতো রোজা রাখিনি। আমারতো খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। শফিকের জন্য কতক্ষন বসিয়ে রাখবি আমাকে? কিছু অন্তঃত খেতে দে”।

মল্লিকাকে নিয়ে মহুয়া ভেতরে চলে যেতেই আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। দুই মিনিট ঝিম ধরে বসে থাকলাম। আমি মল্লিকা সম্পর্কে কিছুই জানিনা, ওর পরিবার সম্পর্কে কিছুই জানিনা, অথচ আমার মনে হচ্ছিল এই মেয়েকে এখানে দেখবো বলেই নিয়তি আমাকে এখানে এনেছে। আরেকটি ব্যাপারে এখন সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে, নিপা আর মহুয়া প্ল্যান করেই কি এতসব আয়োজন করেছে! মল্লিকা হয়তো কিছুই জানেনা, ওর হয়তো অন্য কোথাও এফেয়ার চলছে। হায় হায়! দুই মিনিটের মধ্যেই আমি এসব কি ভাবছি? মেয়েটির বয়স ১৯ বা ২০ এর বেশী হবেনা, আর আমার বয়স ৩২ হতে চললো। এই মেয়ে আমার প্রেমে পড়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। এমনটা জোর করেই যেনো ভাবতে শুরু করলাম। নিপার নামাজ পড়া শেষ হয়ে যেতেই ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলাম। শফিক অফিসে আটকা পড়েছে, শফিকের চেয়ারটা খালি রেখেই সবাই বসে পড়লাম খেতে।

মল্লিকা আমার উল্টোদিকে বসেছে। আমি মনের জড়তা কাটিয়ে ছোট্ট করে ডাক দিলাম, “ মল্লিকা, তুমি কি সাবসিডিয়ারীতে কেমিস্ট্রি পড়ছো”?

অনেক স্বাভাবিকভাবে মল্লিকা চোখ তুলে আমার দিকে চেয়ে বললো, “ হ্যাঁ আপনার লেখা বইই আমি পড়ি সাবসিডিয়ারীতে”। ধ্বক করে উঠলো মনের ভেতরটা। জোর করে চেপে রাখা আবেগ আবার বের হয়ে পড়ে এমন অবস্থা হয়ে গেলো আমার। আমি ভুলেই গেলাম যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করি আর মল্লিকা আমার কাছে ছাত্রীসম।

আমি মহুয়াকে বললাম, “ এক কাজ কর, আগামীকাল মল্লিকাকে নিয়ে দুপুরবেলা ধানমন্ডির ‘কাউলুন চাইনিজ রেস্টুরেন্টে চলে আয়। কুমিল্লা চলে যাবি, আমি নিজেও হয়ত সামনের মাসেই আবার আমেরিকায় ফিরে যেতে পারি। তোকে একটু চাইনীজ খাওয়াই, কি বলিস”!
মহুয়া এক কথায় রাজী হয়ে গেলো। বললো ঠিক বেলা পৌনে বারটার সময় ওরা চলে যাবে কাউলুনে। মল্লিকা একটিও কথা না বলে খাবারের প্লেটের মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুকি করছিলো। আমি আর অপেক্ষা করলাম না, সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মৃদুল’দার বাড়ী চলে এলাম।

চার

সারারাত ভালো ঘুম হলোনা, নিজের কাছেই নিজে ধরা পড়ে যাচ্ছিলাম। যখন প্রেম করার বয়স ছিল তখন প্রেম করার মত মানসিক অবস্থা ছিলনা, আর আজ এই ৩২ বছর বয়সে এসে কিনা দূর্বল হয়ে পড়েছি একরত্তি মেয়ের প্রতি! পরদিন বেলা এগারোটার দিকে রেডী হয়ে বের হয়ে গেলাম। রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকা রিক্সাতে উঠেই রিক্সাওয়ালাকে বলে দিলাম ‘কাউলুন চলো’। কাউলুনে এসে রিক্সা থেকে নেমে ভেতরে ঢুকতেই পা আটকে গেলো মাটির সাথে। সামনেই দাঁড়ানো মল্লিকা। আমার আগেই ওরা চলে এসেছে। মল্লিকা পড়েছে ধূসর রঙের জমি টকটকে লাল নক্সীপাড়ের টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ী। ম্যাচ করে লাল ব্লাউজ, লাল টিপ, লাল ফিতার স্যান্ডেল। চুল খোঁপা করে বাঁধা, খোঁপাতে অবশ্য ছোট্ট একটা ফুল ক্লিপ দিয়ে আটকানো।
আমার মনে হলো, ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে খুব আলতো করে বলি ‘তুমি আমার’। এমনই এলোমেলো হয়ে গেছিল মাথা যে খেয়ালই করিনি মল্লিকা একা দাঁড়িয়ে আছে, মহুয়া পাশে নেই। মহুয়া কোথায় জানতে চাইতেই মল্লিকা বললো, “ ও আমাকে এখানে নামিয়ে দিয়ে ওর এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেছে। বলে গেছে একঘন্টার মধ্যেই ও চলে আসবে, ওর জন্য অপেক্ষা করতে বলেছে খানিকটা সময়।

আমি কি মনে মনে এমনটাই চেয়েছিলাম! মল্লিকাকে নিয়ে চাইনীজ রেস্টুরেন্টের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম। মল্লিকা সামনে, আমি পেছনে। এই রেস্টুরেন্টে আমি আগেও এসেছি। রেস্টুরেন্টের ভেতরে একেবারে কর্ণারে আমার খুব প্রিয় একটি জায়গার দিকে মল্লিকা কে নিয়ে গেলাম। একটা চেয়ার মহুয়ার জন্য খালি রেখে আমরা বসলাম মুখোমুখি। আমি প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলাম, ‘লড়েঙ্গে অর মরেঙ্গে ‘ টাইপ প্রস্তুতি।
মল্লিকাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি খাবে বলো? প্রথম রাউন্ড তোমার পছন্দে শুরু হবে, দ্বিতীয় রাউন্ড মহুয়ার পছন্দে শুরু হবে”। মল্লিকা বললো যে তার কোন চয়েস নেই, আমার ইচ্ছেমতই আমি খাবার অর্ডার দিতে পারি। আমি ওয়েটারকে ডেকে বললাম তাদের সেদিনের সবচেয়ে ভাল আইটেমগুলোর মধ্যে সেরা চারটি আইটেম নিয়ে আসতে। মল্লিকাকে অবাক করে দেওয়ার জন্যই এমন নাটকীয়ভাবে খাবার অর্ডার দিলাম।

খাবার অর্ডার করেই বললাম, “ মল্লিকা, তুমি তাঁতের শাড়ী বুঝি খুব পছন্দ করো, তোমাকে অবশ্য শাড়ীতে বেশ লাগে দেখতে। তা কালকে তুমি অমন গম্ভীর হয়ে গেছিলে কেন চোখের তিলের কথা জিজ্ঞেস করেছি বলে”।

মল্লিকা আজ বেশ সহজভাবেই তাকালো আমার দিকে। সাথে সাথে আমার বুকে সানাই বাজতে শুরু করল। মল্লিকা বললো, “ জানেন, আমার মা খুব সুন্দরী। আমার ভাইগুলো খুব সুন্দর। আমারও সুন্দর হওয়াই উচিত ছিল, কিনতু সুন্দরতো হইইনি তার উপর চোখের মধ্যে এমন এক স্পট নিয়ে জন্মালাম। আমার মাকে সবাই বলতো যে মেয়েটা আপনার মত হয়ে ছেলেগুলো যদি বাপের মত হতো তাহলে ভালো হতো। আমার মা খুব সাহিত্যানুরাগী। উনি এইসব সুন্দর বান্দর নিয়ে মাথা ঘামাননা। সেই মাকেও বলতে শুনেছি, আমার চোখের তিলটা গালে হলেই নাকি ঠিক হতো। সেই থেকেই বুঝে গেছি, আমার চোখের এই তিলটা যত নষ্টের মূল” বলেই হাসতে লাগলো মল্লিকা।

আমি মনে মনে বলি, “ ও মেয়ে তুমিতো জানোনা, তোমার চোখে এই কলঙ্কটা ছিল বলেই তোমার চাউনি এতো সুন্দর! তুমিতো জানোনা, এ পর্যন্ত কত সুন্দরী আমার দেখা হয়ে গেছে, কিনতু কারো চোখে যে ঐরকম কলঙ্ক ছিলোনা”!

কিন্তু মুখে বললাম, “মল্লিকা, তোমার হাসিও খুব সুন্দর। আমি সমস্যায় পড়ে গেছি, কোনটা বেশী সুন্দর বুঝতে পারছিনা। চোখ নাকি হাসি”।

মল্লিকা স্যুপের বাটিতে চামচ নাড়াতে নাড়াতে বলেই ফেললো, “ অতনু’দা, আপনি কি আগে থাকতেই জানতেন যে মহুয়া আমাকে এখানে রেখে ওর বন্ধুর বাড়ী চলে যাবে”? আমি একটু থতমত খেয়ে গেলাম। এই মেয়েতো দেখি ভীষন বুদ্ধিমতী। ধরে ফেলেছে আমার চালাকী।
আমি বললাম, “ হ্যাঁ আমি আর মহুয়া মিলেই ঠিক করেছি আজকের প্ল্যান। কিনতু ভাবিনি যে প্ল্যান সাকসেসফুল হবে। সেজন্যই আজকে তোমাকে একা দেখে অবাক হয়ে গেছি। আমি কালকেই এক ফাঁকে মহুয়াকে বলে রেখেছিলাম তোমার সাথে একান্তে কথা বলতে চাই। ওরা সকলেই আমাকে অনেক আগে থেকেই চেনে, জানে। ওদের সাথে কথা বললেই তুমি আমার সম্পর্কে সব জানতে পারবে। আশা করি তুমি বুঝতে পারছো আমি এরপরে কি বলবো। আমি জানি, তুমি এখনও অনেক ছোট, বিয়ের বয়স হয়নি। কিনতু আমার বিয়ের বয়স হয়েছে এবং তোমাকে দেখার পরেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, বিয়েটা করতে চাই এবং তোমাকেই চাই। তোমার মত আমাকে জানিও”।

মল্লিকা আবার পূর্ণচোখ মেলে আমার দিকে তাকালো, “অতনু’দা আমি ছোট বলে অত ছোট নই। ২১ বছর একটি মেয়ের জন্য একেবারেই কম কিছুনা। আপনার কথা মহুয়ার কাছ থেকে গতকালকেই শুনেছি। আপনি কি ভেবেছেন কাল সারারাত নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়েছি? মোটেওনা, মহুয়া আমাকে জাগিয়ে রেখেছে। ওর কাছ থেকেই আপনার একাকী জীবনের গল্প শুনলাম। ওরা আপনাকে খুব ভালোবাসে। সেই ভালোবাসার রেশ মনে হয় আমার ভেতরেও ছড়িয়ে গেছে। আমার বাবা আমাকে এখনই বিয়ে দিতে রাজী হবেননা, তারপরেও আপনার সাথে যোগাযোগ আমার থাকবে। বিয়ে আপনার সাথে হোক আর নাই হোক, আজীবন বন্ধুত্বতো করতে পারি”।

আমি এরপরে আর কিছু ভাবতে পারছিলামনা। মল্লিকা মত দিয়েছে। কি সুন্দর করে নাটকীয় ভাষাতে মত দিয়েছে। আমি জানতাম, ও মেয়ে অনেক বুদ্ধিমতী, সাধারণ পাঁচটা মেয়ের মত ও নয়, ওর চোখ সে কথাই বলেছিল সেদিন। আমি আর কথা না বাড়িয়ে মল্লিকাকে খাওয়ার তাড়া দিলাম। বিল মিটিয়ে দিয়েই মল্লিকাকে নিয়ে চলে এলাম নিপাদের বাড়ী।
নিপাকে আলাদা ঘরে ডেকে নিয়ে সরাসরি বললাম, “ যদি ভাইকে সংসারী দেখতে চাও, আজকেই ঘটকালী শুরু করে দাও। মল্লিকার বাড়ীতে তুমি আর শফিক প্রস্তাব নিয়ে যাবে। মল্লিকার বাবাকে রাজী করানোর দায়িত্ব তোমাদের। যত তাড়াতাড়ি বিয়েটা ঠিক করে ফেলতে পারো ততই মঙ্গল। নাহলে আমি আবার আমেরিকা চলে যাবো”।

এরপরে শফিক আর নিপা গেছিল মল্লিকাদের বাড়ী। কি ভুজুং ভাজুং দিয়ে যেনো মল্লিকার বাবাকে রাজী করিয়ে ফেলেছিল। আমি যতটা তাড়াতাড়ি চেয়েছিলাম, তার চেয়েও অনেক কম সময়ে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো। আমি অবশ্য মল্লিকার বাবার একটি শর্ত মেনে নিয়েছিলাম। উনার শর্ত ছিল, বিয়ের পরেও মল্লিকার পড়া চালিয়ে যেতে হবে। আমি মল্লিকাকে পাওয়ার জন্য তখন যে কোন শর্তেই রাজী ছিলাম। বিয়ের পরে আরও তিন বছর লেগেছিল মল্লিকাকে পুরোপুরি গিন্নী হিসেবে পেতে।
মাস্টার্স পরীক্ষা হয়ে যেতেই মল্লিকা আমার কাছে এসে বলেছিল, “আজ থেকে আমি দত্ত গিন্নী হয়ে গেলাম। আমি পড়া শেষ করেছি তোমার মুখ চেয়ে। বাবাকে তুমি কথা দিয়েছিলে আমাকে মাস্টার্স কমপ্লীট করাবে বলে। আমি আজ এখানেই পড়ালেখার সমাপ্তি ঘোষণা করছি। আজ থেকে তোমার একাকী জীবনেরও সমাপ্তি ঘটলো। যতদিন আমরা দুজনে বেঁচে থাকবো, তুমি আমাকে ত্যাগ না করা পর্যন্ত আমি তোমাকে ছেড়ে যাবোনা। আমি চাকুরীও করবোনা, শুধুই তোমার হয়ে থাকবো”।
আমার মলি কথা রেখেছে। ও গত ২৫ বছরে আমার একাকী জীবনের না পাওয়াগুলো পুষিয়ে দিয়েছে। আমার বন্ধুদের কাছে শুনতাম বিয়ের পরে আস্তে আস্তে নাকি প্রেম- ভালোবাসার আবেগগুলো ভোঁতা হয়ে আসে। কিনতু আমাদের বিয়ের ২৫ বছর পরেও টের পাই, আমাদের ভালোবাসা আবেগ অনুভূতিতে টান ধরেনি। আমি এখনও মল্লিকার চোখের দিকে তাকালেই সেই সদ্য তরুণীকে দেখতে পাই। মল্লিকা মাঝে মাঝেই আমাকে জিজ্ঞেস করতো ওর মধ্যে আমি এমন কি সৌন্দর্য্য খুঁজে পেয়েছি, যার জন্য এমন মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম ওকে বিয়ে করার জন্য। আমি কখনও ওকে বলিনি, ওর চোখজোড়া আমাকে এমন করে পাগল করে দিয়েছিল।

ঠিক করেছি, আজকেই সেটা ওকে বলবো। আমাদের ২৫ বছর বিবাহবার্ষিকীতে মল্লিকার জন্য আমি খুব দামী ব্র্যান্ডের ‘আই মেকাপ’ এর সেট কিনেছি। এখন উপহার বাণীতে লিখবো, “ মল্লিকা, তুমি অনেকবার জানতে চেয়েছো তোমার কোন সৌন্দর্য্যের প্রতি আমি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। কোনদিন তোমাকে এই প্রশ্নের উত্তর দেইনি। ইচ্ছে করেই দেইনি। আমার মনে হয়েছে, তুমি যদি জেনে যাও আমার পছন্দের কথা তাহলে আর কোনদিন সতস্ফূর্তভাবে আমার দিকে তাকাতে পারবেনা। হ্যাঁ, তোমার ঐ দুটি চোখ, চোখের ঐ কলঙ্ক আমাকে পাগল করেছিল। তোমার মা যতবার দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছেন কেনো তোমার চোখের তিল গালে এসে ফুটলোনা বলে, ঈশ্বর ততবার হেসেছেন। হাসবেনইতো, ঈশ্বর আমাকে এক জীবনে নানাভাবে পরীক্ষা করেছিলেন, আমি পরীক্ষায় পাশ করেছি বলেই আমার জন্য এই উপহার রেডী রেখেছিলেন। তোমাকে পেয়ে আমার জীবনের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। তোমার চোখ এখনও আমাকে কিভাবে টানে তা স্বীকার করে নিলাম ‘উপহার’ পছন্দ করতে গিয়ে। বাকী জীবন ঐ ‘তিলায়িত চোখের’ ছায়ায় আমাকে ঢেকে রেখো।
শুভ ২৫তম বিবাহবার্ষিকী!!!!!!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
স্বাধীন অসম্ভব সুন্দর গল্প।
মৃন্ময় মিজান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দারুণভাবে পাঠককে ধরে রাখল গল্পটি। অনেক ভাল লাগল। গল্পটার কাহিনী শুরু হল মেলবোর্ণে । আচ্ছা ওখানে কি বৃষ্টিতে 'চারিদিকে প্যাচপ্যাচে কাদা'র মত অবস্থা তৈরি হয় বাংলাদেশের কোন অজপাড়াগা'র মতই ? আর মনে হল গল্পের শুরু মেলবোর্ণে না হয়ে মেরিল্যণ্ডে হলেই বেশি মানাত!
প্রিয় মৃন্ময়, মেলবোর্ণে প্যাচপ্যাচে কাদা হয় কিনা সেটা অতনুকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। অতনু যখন মেরীল্যান্ডে ছিল, তখন মল্লিকা ছিল কুমিল্লাতে। তাই গল্পটা মেরীল্যনাডে শুরু হতে পারেনি। হা হা হা হা ! গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনেই খুব ভালো লাগছে।
আনিসুর রহমান মানিক অনেক বড় ,অনেক সুন্দর ....
আচ্ছা এরপর থেকে চেষ্টা করবো গল্প ছোট করতে। আপনার সুন্দর ছিমছাম মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আহমেদ সাবের আপনার সব গল্পই বেশ বড় হয়। এটাও সেই ধারা মেনে চলেছে। গল্প মিলনাত্মক এবং সুখপাঠ্য।
আর বলবেন না সাবের ভাই, যতই ছোট করতে চাইনা কেনো, গল্প ছোট আর হয়না! বিয়োগান্তক পরিনতির কথা মনে থাকে অনেকদিন, তারপরেও কিছু কিছু ঘটনা আছে যা মিলনান্তক না হলে যেনো মানায় না! এই গল্পটিও তেমনি।
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ অসাধারণ মিষ্টি প্রেমের গল্প । গল্পের থিম ও উপস্থাপন দারুণ হয়েছে। তিলায়িত চোখের মায়াবী রেশটা মনে দোলা দেবে বহুদিন। অভিনন্দন ও শুভকামনা দিদির জন্য।
জালাল ভাই অনেক ধন্যবাদ। তিলায়িত চোখের মায়াবী রেশ যতদিন মনে দোলা দেবে, আমার কথাও ততদিন মনে থাকবে। এতো বিরাট বড় পাওয়া আমার জন্য!!!!
আহমাদ মুকুল আজকাল মিলনান্তক গল্প খুব একটা দেখি না। মল্লিকা’র সাথে প্রথম দেখার পর্ব থেকেই মনে হয়েছিল- তিনিই স্বপ্ন নারী। সেখান থেকে পিছনে গিয়ে স্ত্রীর নামটা নিশ্চিত হয়ে আসলাম ‘মল্লিকা’। পুরো গল্পটি অসম্ভব সুন্দর। কিন্তু ত্রুটি ওটুকুই- কোন সাসপেন্স থাকলো না। তবে এটাও স্বীকার করছি, সাসপেন্স থাকতেই হবে এমন কথাও নেই। সবমিলিয়ে তৃপ্তিকর লেখার জন্য সাধুবাদ।
হা হা হা হা আমার মুকুল ভাইয়াটি, সাসপেন্স 'কথা রাখেনি বনলতা' তে আছে। তাছাড়া বিয়ের ২৫ বুছর পরেও নায়ক নায়িকার প্রতি একইরকম আকর্ষণ বোধ করে, জীবনে এরচেয়ে বড় সাসপেন্স আর কি আছে!!!!!! অনেক ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য।
মোঃ আক্তারুজ্জামান রীতাদি, তোমার গল্পের নায়ক ২৫তম বিবাহ বার্ষিকীতে মল্লিকার তিলায়িত চোখের ছায়ায় বাকী জীবন কাটানোর অভিপ্রায়ে প্রিয়াকে দামী ব্রান্ডের আই মেকাপ সেট কিনে দিয়েছে| আর আমি আমার আধা-বুড়ি বৌকে মাত্র ১০০ টাকায় একটা আইসক্রীম কিনে দিলাম- কষ্টে সৃষ্টে এতগুলি বছর এক সাথে কাটানোর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে| এই বৈশাখের ৩ তারিখে আমার ২৬ তম বিয়ে বার্ষিকী গেল| এত সুন্দর একটা গল্প সুন্দর করে লেখার প্রশংসা নাইবা করলাম| শুধু শুভো কামনা জানালাম আরও বহুকাল তুমি সবার মাঝে থেক- এমনি সব দারুন দারুন লেখা নিয়ে|
হুররে!!! শুভ ২৬তম বিবাহ বার্ষিকী!! বৈশাখেইতো আইসক্রীম! এক্কেবারে পারফেক্ট! গল্পের কথা বাদ, আপনার বাস্তবটাই সত্যি।
বিষণ্ন সুমন বেশ আবেগী গল্প । কিছু দৃশ্যকল্প যেন চোখের তারায় ভেসে উঠেছে । লিখার হাত অত্যন্ত সাবলীল । এরকম আমিও লিখতে পারলে খুশি হতাম । ধন্যবাদ লেখিকাকে ।
ধন্যবাদ সুমন। তোমার লেখা আমি পড়েছি। ঢের ভাল লেখো তুমি। ভালো থেকো।
রোদের ছায়া বেশ একটা রোমান্টিক কাহিনী ....অন্য রকম চোখের একটা গল্প ..তথাকথিত প্রিয়ার চাহনি থেকে ভিন্ন .. কিন্তু আমার খুঁজে খুঁজে ভুল বের করতে ভালো লাগে তাই একটু এখনেও করব ( আপনার অনুমতি নিয়ে ) ..... ইফতারের বর্ণনাটি কিন্তু এখনে ঠিক মত আসে নি , আমাদের দেশে ইফতারের একটা ঐতিহ্য আছে শুধু নামাজ পড়া দিয়ে ইফতারের বর্ণনা শেষ করাটা তাই চোখে পড়ল , আর একটা খটকা ছিল সেটা হলো মল্লিকা যে হিন্দু মেয়ে সেটা কিন্তু প্রথম দিকে বুঝা যায় নি / ও আর একটা কথা এত সুন্দর গল্পের নামটি কিন্তু আরো রোমান্টিক হতে পারত "" তিলায়িত চোখ '' আমি হলে এমনটাই দিতাম ..
রোদের ছায়া, অনেক ধন্যবাদ তোমার দৃষ্টিতে ভুল যা মনে হয়েছে, তা বলার জন্য। প্রথমেই বলে নেই, গল্পটি অতনু তার ২৫ বছর আগের স্মৃতি রোমন্থণ করতে গিয়ে বলে চলেছে। ইফতারীর খুঁটিনাটি এমনিতেই তার জানার কথা নয় বা মনে থাকার কথা নয়। ছেলেরা এইসব মেয়েলী ব্যাপার মাথায় রাখেনা এই কথাটি মাথায় রেখেই আমি গল্পটি লিখেছি। অতনু ইফতারীর দাওয়াত খেতে গিয়ে মল্লিকাকে দেখে মল্লিকাতেই মনোযোগ দিয়েছে। ও বলেছে শফিকের বাড়ীর সর্বত্র তার অবাধ যাতায়াত, তাই শফিকের বাড়িতে অতি পরিচিত নিপা কি কি করেছিল সেটা আর গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি ২৫ বছর পরে। আর ২৫ বছর পরে প্রথম দেখার সুখকর স্মৃতিটুকু বলতে গিয়েই কত পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটিয়ে ফেলেছে অলরেডী। হা হা হা !! আর গল্পের নাম 'কাউলুন চাইনীজ রেষ্টুরেন্ট' দিয়েছি, কারন ওখানে গিয়েই সে মন খুলে মল্লিকাকে প্রপোজ করতে পেরেছে এবং মল্লিকাও ওখানেই তার সম্মতি দিয়েছে। তাই ঐ রেস্টুরেন্টটাই তাদের জীবনে স্মরণীয় হয়ে আছে। মল্লিকা হিন্দু না মুসলিম, এই ব্যাপারটি আমার মাথাতেই আসেনি এবং এখনও এটা গল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছেনা। তোমার এমন খোলামেলা আলোচনার জন্য আবার আরেকটি ধন্যবাদ।
রীতা দিদি আমি আবার আপনাকে বিরক্ত করছি ...অতনুর ২৫ বছর আগের স্মৃতিতে নিপা আর মহুয়ার ইফতার রেডি করার আছে কিন্তু মূল ইফতার পর্বটাই ভুলে গেল? আর মল্লিকার ধর্মটা সত্যি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতনা যদি তা শুধু ভালোলাগা বা ভালবাসায় সীমাবদ্ধ থাকত , ওরা তো বিয়ে করেছে ..হুট করে কিন্তু পারিবারিক ভাবে দুই ধর্মের লোকের বিয়ে হয় না আমি সেটাই জানতে চাইছিলাম ..... নাম নিয়ে আপনার কথাই শিরোধার্য ..
মামুন ম. আজিজ আপনার লেখার হাত অতুলণীয়। বেশ কয়েকটি গল্প পড়লাম গত ঘন্টা দুয়েকে ...স্বাদ যেন পেলাম আপনার গল্প এসে।
মামুন, তোমার এই কমেন্ট আমাকে মনে কতটা শক্তি যুগিয়েছে তা পরবর্তী লেখাতে প্রকাশের চেষ্টা করবো। ভাই ভাগ্য আমার বরাবরই ভাল। ভালো থেকো।

১৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪